একাত্তরের ২ মার্চ একটি স্বাধীনতাকামী জাতির চিহ্নস্বরূপ যে নিশান উত্তোলন করা হয়, বাহাত্তরে তা রূপ নেয় লাল সবুজে— যা বাঙালি রাষ্ট্রের মুক্তি, সার্বভৌমত্বের প্রতীক এবং স্বাধীনতার সর্বোচ্চ সম্মান।২৫ মার্চ দিবাগত রাত ১২ টা ২০ মিনিটে অর্থাৎ ২৬ মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মহান স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্যদিয়ে মুক্তিকামী বাঙালি জাতি মহামুক্তির আনন্দে উজ্জীবিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে। অবশ্য বাংলার আপমর জনতার এই স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার পেছনে সবথেকে বড় যে শক্তি কাজ করেছে তা হলো বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের গগনবিদারী বজ্রকণ্ঠের নন্দিত ভাষণ।মার্চ, মহান মার্চ। মার্চকে মহান রূপে উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হলো— মার্চ বাঙালির জাতীয়-সামাজিক-রাজনৈনিক জীবনে স্বাধীকার আদায়ের এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। ৭১’র দোসরা মার্চ প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন, তেসরা মার্চ পল্টনে প্রথম স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা, সাতই মার্চ শেখ মুজিবের দেওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলমন্ত্র— ঐতিহাসিক ভাষণ, ছাব্বিশে মার্চ ওয়্যারলেসের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহান স্বাধীনতার ঘোষণা এবং সাতাশে মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ মার্চকে করেছে তাৎপর্যবহ, গৌরবান্বিত।মার্চ মহান স্বাধীনতার মাস। ২৬ মার্চ বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা, আনন্দ-বেদনার এক মহা উপাখ্যান, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস। প্রতিবছর এইদিনে বাঙালি জাতি পরম শ্রদ্ধাভরে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী মুক্তিকামী বীরদের স্মরণ করে। নানা আয়োজন, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় উদযাপিত হয় দিনটি। যা জানান দেয় স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জাতির বীর সন্তানদের মহান কীর্তি।তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তল হাওয়া তরুণদের গা স্পর্শ করেনি। স্বদেশকে শত্রু মুক্ত করতে জীবন বাজি রাখা জাতির শ্রেষ্ঠ সূর্যসন্তানদের পদধূলি তারা পায়নি। তাইতো অনেকেরই কাছে মুক্তিযুদ্ধ—স্বাধীনতা মানে ছকে বাঁধা কিছু দিবসের সমষ্টি। এজন্য তরুণ প্রজন্মের কাছে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের যথাযথ ইতিহাস পৌঁছে দিতে হবে। যাতে তারা স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একাত্তরের বীরদের ন্যায় নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।দেশকে ভালোবেসে, দেশের স্বার্থে একাত্তরের বীরদের ন্যায় দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে। পরস্পর ভেদাভেদ ভুলে দলমত নির্বিশেষে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বিশ্ব শিখরে। গ্রেনেড, বোমা কিংবা কোনো মারণাস্ত্র নয়, সততা ও ন্যায়ের অস্ত্র দিয়ে দেশকে আগলে রাখতে হবে। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সবটুকু আনন্দ গায়ে মেখে আমাদের জন্মভূমি—প্রিয় বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে সমুজ্জ্বল করতে হবে। যাতে তরুণ প্রজন্ম বুক ফুলিয়ে বলতে পারে, সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে।লেখক : শিক্ষক; তরুণ সংগঠক ও প্রতিষ্ঠাতা, প্রাণডোর।
নাসিব আহসান রুমি
2024-03-26