মহান একুশ বারবার ফিরে আসে আমাদের মাঝে। ফিরে আসে তার গৌরবোজ্জ্বল দীপ্তিমান বর্ণমালার মহান আখ্যান নিয়ে, ভাষা শহীদদের পরম আত্মত্যাগের ইতিহাস নিয়ে। যাতে নতুন প্রজন্ম তাদের মায়ের ভাষার ঐশ্বর্য অক্ষুণ্ণ রাখে, অ আ ক খ—কে হৃদয় কুঠিরে লালন করে।
অথচ একুশ আজ শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার মাঝেই সীমাবদ্ধ। আলোচনা অনুষ্ঠান, পদযাত্রা, সভা-সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান— নানা বর্ণিল আয়োজনে একুশ রূপ নেয় নামমাত্র ভাষার মাসে। ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালীন উপস্থাপক আলোচকদের বলে ওঠেন ‘বাংলা বলেন প্লিজ’, একুশের তাৎপর্য আলোচনা শেষে আলোচক ‘থ্যাংক ইউ’ বলে মঞ্চ থেকে নামেন। গতকাল চিংড়ি মাছ কিনতে বাজের গিয়ে মাছওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম চিংড়ি কতো করে। জবাবে সে বললো, ‘হেডলেসগুলা দুইশো করে আর এইগুলা দুইশো বিশ করে।’ হেডলেস বলতে মাথা ছাড়া আর এইগুলা বলতে মাথাসহ, ভালোটা আরকি।
এভাবেই খেয়ালে-বেখেয়ালে আধুনিকতার নামে একটু একটু করে মায়ের ভাষার মধ্যে ভিনদেশি ভাষা প্রতিনিয়ত ঢুকিয়ে দিচ্ছি আমরা। মায়ের ভাষার সাথে অন্য ভাষার এই জগাখিচুড়ি যেনো নতুন ছন্দে রূপ নিয়েছে। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় এভাবেই আমাদের মায়ের ভাষার শব্দসম্ভার একটু একটু করে বিলীন হচ্ছে কালের পরিক্রমায়।
একুশ আমাদের অহংকার, আমাদের আবেগ-অনুরাগের এক মহামিলন। বাহান্ন’র ভাষা শহিদদের পবিত্র রক্তস্রোতের মধ্যদিয়েই বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের বর্ণিল অধ্যায়ের সৃষ্টি।
তাই বলতে হয়—
ফেব্রুয়ারি বাঙালি চৈতন্যের এক প্রজ্জ্বলিত শিখা
দমে না যাওয়া নবীনের বিস্তীর্ণ শোভাযাত্রা
অজস্র অদম্য তরুণের অপ্রতিরোধ্য উচ্ছ্বাস
বেঁচে থাকার সহস্র প্রেরণা!
কাজেই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি ক্ষণে বাংলাভাষা মায়ের ন্যায় জড়িয়ে থাকুক আমাদের অস্তিত্বের সাথে। আমাদের উচ্চারিত প্রতিটি শব্দই হোক মায়ের ভাষায়।
শিক্ষক; প্রতিষ্ঠাতা, প্রাণডোর ও তরুণ সংগঠক
ADDVERTISE HERE 728 x 90 1