#দুদকের তদন্ত চলমান # খুলনায় ফিরে আসার খবরে ক্ষিপ্ত নাগরিক সমাজ
খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাবেক তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী তাপসী দাসের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা রুজু হয়। আবারও তিনি খুলনায় আসার চেষ্টা করছেন। এমন সংবাদে ফুঁসে উঠেছেন খুলনাবাসি।
খুলনায় চাকরি করা কালে কোটি কোটি টাকার সম্পদ তিনি গড়ে তোলেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের এ কর্মকর্তা। শহরের প্রাণ কেন্দ্রে ১০ কাঠা জায়গার উপর প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের একটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া বয়রাতে তার স্বামীর সাথে ৫ কাঠা জমি কিনেছেন যার বর্তমান বাজার মূল্য ৫ কোটি টাকা। তার বাবার বাড়ী তেরখাদায় আলীশান বাড়ী ও মন্দির নির্মাণ করেছেন। যার মুল্য কয়েক কোটি টাকা। তার আরেক ভাই মুক্তি দাসকে দিয়ে তার সকল অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তার খুলনার বাড়ীর পাশেই তার বোন লিপি দাসকে একটি ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন। যার মুল্য কমপক্ষে ৫০ লক্ষ টাকা। বাবা,মা,ভাই, বোন ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের নামেও প্রচুর সম্পদ করেছেন। ভারতে তার ভাই দেবদাস এর নামে প্রচুর জমি ক্রয় ও বাড়ী নির্মাণ করেছেন।
তাপসি দাস দুর্নীতির দায়ে ২০১২ সালে তিনি চাকুরী থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন। পরে রাজনৈতিক তদবীরে চাকুরী ফিরে পান। ২০১৮ সালে তার এই সম্পদের বিষয়ে নড়াইলের একজন ঠিকাদার দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করলে সেটি তদন্ত করে ১ কোটি ৩৮ লক্ষ ৫৩ হাজার ৪৬৬ টাকার অবৈধ সম্পদের সত্যতা পায় দুর্নীতি দমন কমিশন। এ ছাড়া ভারতেও তাপসী বিশ্বাসের বাড়ী ও মার্কেট আছে বলে শোনা যাচ্ছে।
খুলনা,সাতক্ষীরা-চুকনগর সড়কে প্রথম কিলোমিটার মিনা বাজার হতে ময়লাপোতা পর্যন্ত কোন টেন্ডার বরাদ্দ ছাড়াই রাতের আঁধানে বিটোমিনাস অভারলে কাজ করা হয়। রানা বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নি¤œমানের রিজিট পেমেন্ট করায় রাস্তার কাজ শেষ না হতেই উপরের অংশ উঠে যায়। রড দিয়ে ঢালাই না করে শুধুমাত্র ঢালাই দেয়ায় রাস্তা অবস্থা এখনও নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এ কাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলে তদন্ত টিম গঠন হয়।
তাপসী দাস এখন ফরিদপুর জোনে তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন। খুলনাায় আবারও ফিরে এলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে এমন অভিযোগ নাগরিক নেতাদের। তাপসী দাস খুলনায় কর্মরত থাকা কালে অনিয়ম ও দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ নিয়ে তদন্তে মাঠে নামে সড়ক বিভাগ। তার বিরুদ্ধে গঠন হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটিতে ছিলেন সড়ক বিভাগ কুষ্টিয়া সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: মাসুদ করিম, সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিনসহ তিন কর্মকর্তা। এর পূর্বে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে ঢাকার রমনা মডেল থানায় এজাহার দায়ের করেন। এছাড়া স্থানীয় ঠিকাদারগণ ক্ষুব্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগও করেন।
এছাড়া তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী তাপসী দাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তে মন্ত্রণালয় থেকে আরও একটি টিম গঠন হয়। তদন্ত টিমে আহবায়ক হিসেবে ছিলেন, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের জয়েন্ট সেক্রেটারি মো: আনিসুল হক, উপ-সচিব মো: শামীমুজ্জামান ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো: হামিদুর রহমান।
ADDVERTISE HERE 728 x 90 1
গত ৬/৭/২২ তারিখ খুলনার সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী খুলনা সার্কেল মো: মনিরুজ্জামানকে দুদকের উপ-পরিচালক কার্যলয় থেকে চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে তাপসী দাসের যাবতীয় দুর্নীতির খতিয়ান জমা দিতে বলা হয়। তাপসী দাস তখন গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। এর আগে দুদক তাপসী দাসের সম্পদের হিসাব খতিয়ে দেখেন। তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নড়াইল ও গোপালগঞ্জ দায়িত্ব পালন কালে ২০/৬/২০১৭ তারিখ দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৪৮ লাখ ৭৫ হাজার ৮৬৫ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং ২৫ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণের মিথ্যা তথ্য প্রদর্শন করাসহ তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার ৪৬৬ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ও ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন। বিষয়টি নিয়ে প্রধান কার্যালয় দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকা এর সহকারী পরিচালক (অনু ও তদন্ত-১) মো: ফারুখ আহমেদ গত ৫/২/২০১৮ তারিখ রমনা মডেল থানা ডিএমপি ঢাকা বরাবর এজাহারের জন্য আবেদন করেন। বিভিন্ন কৌশলে তাপসী দাস এসময়ে পার পেয়ে যান। তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ হলে রমনা মডেল থানায় মামলা হয় যার নম্বর জি, আর ১১/১৮, তারিখ ০৫/০২/২০১৮ ইং। এ ছাড়া একই সময়ে রমনা মডেল থানায় আরও একটি মামলা রেকর্ড হয় যার নম্বর ১০৮।
খুলনার নাগরিক নেতা এ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী তাপসী দাস এমন অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকলে তাকে আর খুলনায় না দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।