#পাসের হার ৬শতাংশ
#অধিকাংশ ফেল করেছে গনিতে
উপজেলার নিশানবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসায় ফলাফলের চরম বিপর্যয় ঘটেছে। দাখিল পরীক্ষায় মাত্র ছয় শতাংশ পাস করেছে। সসচেয়ে বেশি ফলাফল খারাপ হয়েছে গনিত বিষয়ে। এ বিষয়ের শিক্ষক দু’বছর যাবত অনুপস্থিত। ফলাফল নিয়ে ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থী ও অভিবাবকরা।
চলতি বছরের দাখিল পরিক্ষা ৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৮ জন ফেল, পাশ ২ জন। যার মধ্যে একজন রয়েছে প্রাক্তন শিক্ষার্থি। শিক্ষার্থী ও অভিভবাবকদের দাবি মাদ্রাসার সুপার শহিদুল ইসলাম, গণিত শিক্ষক মৌসুমি পারভিন সহ কিছু কিছু শিক্ষক অনুপস্তিতের কারনে এরকম ফলাফল বিপর্যয়।
২৮ জন ফেল করা শিক্ষার্থীর মধ্যে গণিত বিষয়ে ফেল করেছে ১৮ জন, এই গনিতের শিক্ষক মৌসুমি পারভিন। তিনি ২০২২ সালের শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত। এবং মাসের পরে মাস অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন। যা মাদ্রাসা সুপার ও তিনি ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন বলে একটি সুত্র জানিয়েছেন। তবে মাদ্রাসা সুপারের দাবি প্রথমে মাতৃত্বকালিন ও পরে বিএড করার জন্য ছুটিতে রয়েছে। এখানেও রয়েছে গড়মিল, মাদ্রাসার সুপার খুলনায় বিএড করার কথা জানালেও গণিত শিক্ষক ( মৌসুমি পারভিন )’র ম্বামী মুঠোফোনে পাবনায় বিএড করার কথা জানান। কারো কথায় কোন মিল নেই। তবে তিনি কোথাও বিএড করার জন্য ভর্তি হন নাই বলে একটি সুত্র জানায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৮ মার্চে গণিত ম্যাডাম মৌসুমি পারভিন দুইটি পুত্র সন্তান জন্ম দেন, তারও ৫ মাস আগে থেকে মাদ্রাসা সুপারের মাধ্যমে মাতৃত্বকালীন ছুটি নেন তিনি। নীতিমালা অনুযায়ী সর্বচ্চ ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়া গেলেও গণিত ম্যাডাম মৌসুমি পারভিন প্রতিষ্ঠানে আসেন না ২ বছর ৫ মাস ধরে। এছাড়াও অনুসন্ধানে জানা গেছে ২০২৩ সালের নীতিমালা অনুযায়ী একজন শিক্ষকের বছরে ১৫ দিন নৈমিত্তিক ছুটির বিধান থাকলেও মাদ্রাসার সুপার ৪০ দিনের বেশি নৈমিত্তিক ছুটি নেয়। যা হাজিরা খাতায় প্রমান পাওয়া যায়। গোপন সুত্রে জানা গেছে গণিত ম্যাডাম মৌসুমি পারভিন চাকরিচ্যুত হওয়ার জন্য বার বার রিজাইন পত্র দিতে চাইলেও গ্রহণ করছেন না মাদ্রাসার সুপার। কারন মাদ্রাসার সুপার গণিত ম্যাডামের বেতন-ভাতা থেকে প্রতি মাসে বড় একটা অংশ গ্রহণ করেন। এছাড়াও মাদ্রাসার সুপারের নামে অসংখ্য অনৈতিক কর্মকান্ডের সন্ধান পাওয়া যায়। যার মধ্যে দাখিল পরিক্ষা ২০১৮ তে পরিক্ষার হলে পকেট ভর্তি নকল নিয়ে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা কামরুজ্জামান স্যারের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়া অন্যতর। যাতে জরিমানাও করা হয়েছিল মাদ্রাসার সুপারকে। এবং ২০১৮ সালে সেসিপ থেকে বরাদ্দকৃত পাঠাগার ও আলমারি ক্রয়ের টাকা আত্মসাৎ করে, পরবর্তীতে জানাজানি হলে নামমাত্র একটি ছোট আলমারি ক্রয় করে পাঠাগারের বই না কিনেই ধামাচাপা দেন বিষয়টি। বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গভর্নিং বডির সভাপতি মোহাম্মদ তারেক সুলতানকে ফাঁকি দিয়ে মাদ্রাসার সুপার নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করলে তা তিনি জানতে পেলে হাতে নাতে ধরা পড়ে, ফলে সে বোর্ড বাতিল করে দেয়। এবং পরীক্ষা হলে নকলের সহায়তার বিষয়ে সত্যতা পাওয়ার কারণে তাকে পরীক্ষার হল থেকেও সাসপেন্ড করেন।
শিক্ষার্থীদের অভিবাবকরা জানান, শিক্ষকদের মাসের পর মাস অনুপস্থিতির কারণে মাদ্রাসায় নিয়মিত পাঠদান হচ্ছে না। এতে করে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় চরম সংকটের মধ্যে পড়েছে। জানা যায়, ১৯৮৪ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই পড়ালেখার মান ভালো হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা এ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষকদের লাগামহীন অনুপস্থিত থাকার কারণে ভেঙে পড়েছে পাঠদানের নিয়ম শৃঙ্খলা। দিনে দিনে বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে স্থানীয়রা জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিকাংশ সহকারী শিক্ষক জানান, মাদ্রাসার সুপার ও গণিত ম্যাডাম চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে মাসের পর মাস স্কুলে উপস্থিত না হয়েও নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। তাদের অনিয়মের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
গণিত ম্যাডাম মৌসুমি পারভিনকে মুঠোফোনে কল দিলে তার স্বামী ফোন রিসিভ করে বলেন, তার স্ত্রীর সাথে কথা বলতে হলে পাবনা গিয়ে বলতে হবে। তারা এখন পাবনায় অবস্থান করছেন।
মাদ্রাসার সুপার শহিদুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসায় এ বছর ফলাফলে চরম বিপর্যয় ঘটেছে। তবে কি কারণে হচ্ছে এটা বলা যাচ্ছে না।
গনিত শিক্ষকের ব্যাপারে তিনি জানান, বিএড করার জন্য মাদ্রাসার গনিত শিক্ষক ছুটিতে রয়েছেন। খুলনা বিএড করছে বলে জানান তিনি।