ডুমুরিয়ার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল খোকন পাশার তত্ত্বাবধানে সাভারে গণহত্যা
খুলনা প্রতিনিধি
পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলালের নেতৃত্বে এবং শেখ হেলালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও ডুমুরিয়ার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল খোকন পাশার তত্ত্বাবধানে গত ৫ আগস্ট ঢাকার সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় গণহত্যা সংঘটিত হয়। এ হত্যাকান্ডের শিকার খুলনা তেরখাদার পানতিতা গ্রামের মোঃ জাফর শেখের ছেলে মোঃ হামিদ শেখ। নিহতের মা রাশিদা বেগম বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলালসহ ৪৪ জনের নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলার আবেদন করা হয়েছে। এজাহার সুত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সরাসরি নির্দেশে সাভার ও আশুলিয়া এলাকার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলালের নেতৃত্বে এবং শেখ হেলালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি মোস্তফা কামাল খোকন পাশার তত্ত্বাবধানে খুলনা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাছাইকৃত সন্ত্রাসীদের নিয়ে আন্দোলন দমাতে নগদ অর্থের যোগান, অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ এবং নিজেরা উপস্থিত থেকে গুলি বর্ষণ, দেশীয় অস্ত্র, হকিস্টিক এবং রাম দা নিয়ে হামিদসহ আন্দোলকারীদের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং গনহত্যা চালায়। এতে করে হামিদসহ অসংখ্য আন্দোলনকারী নিহত ও আহত হয়।
থানায় দায়েরকৃত মামালার বিবরণীতে জানা যায়, গত জুলাই-আগস্টে কোটা সংস্কারের উদ্দেশ্যে বৈষম্যবিরোধী যৌক্তিক ছাত্র আন্দোলনে সারা দেশে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। ১৬ই জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদে মোঃ হামিদ শেখ ১৭ই জুলাই থেকে রাজপথে নেমে সক্রিয়ভাবে আন্দোলন শুরু করে। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকার পতনের পূর্বক্ষণে আশুলিয়া থানার সামনের রাস্তায় ছাত্র-জনতা মিছিল করে। ছাত্র জনতার অধিকার আদায়ের সেই যৌক্তিক মিছিল দমন করার জন্য আসামীদের পরিকল্পনা এবং সরাসরি নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে উল্লেখিত আসামীসহ আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিকলীগের কয়েকহাজার কর্মী সরাসরি গুলি বর্ষণ করে। আসামীদের ছোড়া গুলিতে জাফর শেখের মাথা ও বুক গুলিবিদ্ধ হয় এবং তার গুলিবিদ্ধ দেহকে আসামীরা ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাহসী পদক্ষেপে ছিনিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়। আন্দোলনকারীরা হামিদকে সাভার গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মামলার আসামীরা হলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শেখ হাসিনার ভাই ও সাবেক সংসদ সদস্য, বাগেরহাট-১) শেখ হেলাল, সাবেক সংসদ সদস্য ডাক্তার এনামুর রহমান, আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত পাপ্পু, সাবেক সংসদ সদস্য (ঢাকা-১৯ সাভার) তালুকদার মোঃ তৌহিদ মুরাদ, সাভার
পৌর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি,
আব্দুল হালিম, সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান, সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলম রাজীব, সাভার উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মিসেস হাসিনা দৌলা,
ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল ইসলাম, ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনির, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ ঢাকা ২০ (সাভার) বেনজীর আহমেদ, ঢাকা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান
মাহবুবুর রহমান।
খুলনার আসামীরা হলেন, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দীন জুয়েল ,বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক শেখ সোহেল, জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল পাশা খোকন, মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সদর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাড. সাইফুল ইসলাম, আওয়ামীলীগ নেতা বেগ লিয়াকত আলী, মাকসূদ আলম খাজা, খানহাজান আলী থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবিদ হোসেন, শেখ সোহেলের ক্যাশিয়ার মোঃ মফিজুর রহমান ,সাবেক সংসদ সদস্য বাগেরহাট-২ শেখ সারহান নাছের তন্ময়, খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সদস্য সাইফুল ইসলাম সাইফ, খুলনা-৩ এর সাবেক সংসদ সদস্য মন্নুজান সুফিয়ানের ভাই ও এপিএস মোঃ শাহাবুদ্দিন আহমেদ, মুন্সি আব্দুর রশিদ, সেলিম রেজা, রিপন হাওলাদার, রনবীর বড়াই সজল, দেবদুলাল বড়াই বাপ্পি, মেহেদী হাসান রাসেল, খানজাহানআলী থানার শেখ জালাল, শেখ ফরিদ, শেখ সজীব প্রমূখ।